বুধবার, ২৭ জুন, ২০১২

কুরআন-হাদীছের আলোকে শবে বরাত - পর্ব ১৮


بسم الله الرحمن الرحيم

হাদীছের আলোকে শবে বরাত - ১০
গত কয়েক পর্বে আমরা শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কিত মোট এগারটি হাদীস উল্লেখ করে সেগুলোর কয়েকটিকে সহীহ বা হাসান প্রমাণ করেছিলামযদি শবে বরাতের ফযীলতের ব্যাপারে আর কোন হাদীস না থাকত, তবে এই হাদীসগুলোই এ রাতের ফযীলত সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এবং এ রাতে মাগফেরাতের উপযোগী নেক আমলের গুরুত্ব প্রমাণিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট হত
এই পর্বে আমরা আরও একটি হাদীস সম্পর্কে আলোচনা করব এবং সাথে সাথে এই হাদীস সম্পর্কে মুহাদ্দিসীনদের মতামত পর্যালোচনা করব

দ্বাদশ হাদীছ(حديث ضعيف)
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন, পাঁচটি রাত এমন আছে যে রাতগুলোতে দু'আ ফেরত দেয়া হয় নাজুমআর রাত, রজবের প্রথম রাত, শাবানের পনের তারিখ এর রাত
এবং দু'ঈদের রাতে
উক্ত হাদিছটি
হাফেয আব্দুর রাজ্জাক তাঁর মুসনাদে
ইমাম বায়হাকী তাঁর শুয়াবুল ঈমানে

শবেবরাতের হাদীছগুলোর ব্যাপারে মুহাদ্দিছীনে কেরামের অগ্রগণ্য ও চূড়ান্ত অভিমতঃ

প্রথম অভিমতঃ আল্লামা মুবারকপুরী
একারণেই হাফিয মুহাম্মদ আব্দুর রহমান ইবনু আব্দির রহিম আল মুবারকপূরী বলেছেনঃ
"
জেনে রাখো যে, শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কে বিভিন্ন ধরণের হাদীছ এসেছেযার ফলে শরীয়তে তার ভিত্তি আছে বলে বুঝা যায়তন্মধ্য থেকে আলোচ্য অধ্যায়ের হাদীছ এবং আয়শা (রঃ) এর হাদীছ, মুআয (রঃ) এর হাদীছ, আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রঃ) এর হাদীছ এবং আলী (রঃ) এর হাদীছসুতরাং এসব হাদীছের সমষ্টি তাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট প্রমাণস্বরূপ যারা শরীয়তের মধ্যে শবে বরাতের কোন ভিত্তি নেই বলে মনে করে। "
(
তুহফাতুল আহওয়াজীঃ খ-৩, পৃ-৪৪২, ১৩৫৩, দারুল ফিকির )

দ্বিতীয় অভিমতঃ আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহঃ)
মুহাদ্দিছুল আসর আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহঃ) বলেনঃ
"
এ রাতটি বরাতের রাতরাতটির ফজীলত সম্পর্কে সহীহ হাদীছসমূহে এসেছে। "
(
আলারফুস শাযীঃ পৃ-১৫৬ )

তৃতীয় অভিমতঃ নাসির উদ্দীন আলবানী
নাসিরুদ্দীন আলবানী শবে বরাত সম্পর্কীয় সকল হাদীছ এক সাথে করে সেগুলোর সনদ নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করেছেন এবং পর্যালোচনার শেষে তার সার নির্যাস পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরেছেন এভাবেঃ
"
সারকথা হলো এ সকল সূত্রের সমষ্টির কারণে (শবে বরাত সম্পর্কীয়) হাদীছ নিঃসন্দেহে সহীহকোন হাদীছ অত্যধিক দুর্বলতা থেকে নিরাপদ হলে এর চেয়ে কম সূত্রের মাধ্যমে সহীহ প্রমাণিত হয়যেমনটি আয়শা (রঃ) এর বর্ণিত হাদীছটি যা অত্যধিক দুর্বলতা থেকে নিরাপদসুতরাং কাসেমী হাদীছ পর্যালোচক ও সমালোচকদের থেকে নকল ইসলাহুল মাসাজিদ গ্রন্থে যা উল্লেখ করেছেন যে, শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কে কোন সহীহ হাদীছ নেইতার এ কথার উপর আস্থা রাখা উচিত নয়। "
(
সিলসিলাতুল আহাদিসা সহীহাঃ খ-৩, পৃ- ১৮৩ )

চতুর্থ অভিমতঃ শাইখ শুয়াইব আল আরনাউত
সময়কালীন বিশিষ্ট হাদীছ পর্যালোচক শাইখ শুয়াইব আল আর নাউত মুসনাদে আহমদের টীকায় আব্দুল্লাহ বিন আমর (রঃ) কর্তৃক শবে বরাতের হাদীছটির উপর মন্তব্য করতে গিয়ে বলেনঃ
"
হাদীছটি তার সহযোগী হাদীছগুলো দ্বারা সহীহ বলে বিবেচিতসহযোগী হাদীছগুলো হচ্ছে
আয়শা (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীছ
মুআয বিন জাবাল (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীছ
আবু মূসা আল আশআরী (রঃ) এর হাদীছ
আবু বকর (রঃ) এর হাদীছ
আবু ছালাবাহ আল খুশানী (রঃ) এর হাদীছ
আবু হুরায়রা (রঃ) এর হাদীছ
আউফ বিন মালিক এর হাদীছ
এ সকল সহায়ক বা সমর্থক হাদীছের প্রত্যেকটির সূত্রের মধ্যে যদিও কিছু অসুবিধা আছে তবে এসব হাদীছের সমষ্টি দ্বারা মূল হাদীছ সহীহ ও শক্তিশালী বলে সাব্যস্ত হয়েছেসুতরাং কাসেমী (রহঃ) হাদীছ পর্যালোচক ও সমালোচকদের থেকে ইসলাহুল মাসাজিদ গ্রন্থে যা উল্লেখ করেছেন যে, মধ্য শা'বানের রাতের ফজীলত সম্পর্কে সহীহ হাদীছ নেই এর অর্থ হলো এ ব্যাপারে কোন হাদীছ সহীহ সূত্রে প্রমাণিত নেইকিন্তু সবগুলো হাদীছের সমষ্টিগত সূত্রের দ্বারা হাদীছগুলো পরস্পরে শক্তিশালী ও মজবুত হয়ে বিষয়টি প্রমাণিত এতে কোন সন্দেহ নেই। "
(
মুসনাদে আহমদঃ খ-১১, পৃ-১৬, ৬৬৪২ )

আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যা বলেনঃ
"
এ রাতের ফজীলতে বেশ কিছু মরফূ হাদীস এবং আছার বর্ণিত আছে যে প্রমাণ করে যে এ রাতটি ফজীলতপূর্ণপূর্ববর্তীদের কেউ কেউ এ রাতে বিশেষভাবে সালাত আদায় করতেন। ... যে মতের উপর আমাদের মাযহাবের বা অন্যান্য মাযহাবের বহু সংখ্যক বরং বেশিরভাগ আলেম রয়েছেন তা হলো এই রাতটি অন্যান্য রাতের উপর ফজীলত রাখে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল এর স্পষ্ট কথার মাধ্যমে এটিই জানা যায়আর যেহেতু এ বিষয়ে একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং পূর্ববর্তীদের আমল সেসকল হাদীসকে সত্যয়ন করে। "

(
ইক্তিদাউস সিরাত আল মুস্তাকিম )