----আ স ম আহসান উল্লাহ আব্দুল্লাহ
মানুষের জীবনের সবচেয়ে দুর্বল সময় শিশু ও বৃদ্ধ কাল। এই সত্য কথাটি আমাদের সবাইর জানা, তবুও আমরা এই বিষয়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের চারপাশকে গুরুত্বপুর্ন ভাবে সচেতনতার মাধ্যমে পর্যবেক্ষন করিনা। আমাদের নিজেদের পরিবার থেকেই এই বিষয়টির পর্যবেক্ষন করা ও অনুধাবন করে বিহিত ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্ত্বপুর্ন।
মানুষের জীবনের সবচেয়ে দুর্বল সময় শিশু ও বৃদ্ধ কাল। এই সত্য কথাটি আমাদের সবাইর জানা, তবুও আমরা এই বিষয়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের চারপাশকে গুরুত্বপুর্ন ভাবে সচেতনতার মাধ্যমে পর্যবেক্ষন করিনা। আমাদের নিজেদের পরিবার থেকেই এই বিষয়টির পর্যবেক্ষন করা ও অনুধাবন করে বিহিত ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্ত্বপুর্ন।
আমাদের সমাজের অনেক জায়গায় দেখা যায়, অনেকের বৃদ্ধ বয়সে একধরনের একাকিত্ব আচ্ছন্ন করে, যার কারন বিভিন্ন অজুহাতে সন্তানেরা বৃদ্ধ বাবা-মা কে সময় দিতে পারেনা বা দেয়না, আবার নাতী-নাত্নীরাও লেখা-পড়া ও খেলাধুলা সহ বিভিন্ন ব্যস্থতার দেখিয়ে বৃদ্ধ মানুষটিকে ফাঁকি দিয়ে থাকে। তাই নিজের বাড়িতেও যেনো এক নির্বাসিত জীবনে অত্যন্ত মানবেতর সময় অতিবাহিত করতে হয় আমাদের এই মুরুব্বিকে।
বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৭ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ প্রবীন। তাদের মাঝে অনেকেই অসহায়, পারিবারিক, সামাজিক বিভিন্ন কারনে তারা সমাজের আর দশজনের মত সকল সুখ-সাচ্ছন্দ থেকে বঞ্চিত। বিভিন্ন দেশের দাতা সংস্থা গুলো পযার্প্ত অর্থ না দেওয়ায় বাংলাদেশে বেসরকারী সংস্থা গুলো দেশের অসহায় প্রবীনদেরকে সহায়তায় কাজ করতে পারছে না বা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। কিন্তু একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে বাংলাদেশের মানুষের আয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যক্তিগত ভোগ বিলাসের প্রবণতা যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে করে সমাজের এ অসহায় প্রবীণ শ্রেণীকে সাহায্যের জন্য বিদেশি দাতার উপর নির্ভর করে কাজ করাটা একটা মানবতাহীন সমাজেরই পরিচয় মিলে।
গত বছরের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ মানুষের গড় আয়ু এখন ৬৮ বছর। স্বাধীনতা অর্জণের সময় প্রত্যাশিত আয়ু ছিল ৩৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ১৯৮০ তা বেড়েছে ৫৫ দশমিক ২৪ ও ৯০ সালে ৬০
বছরে উন্নীত হয়েছে, ফলে আমাদের দেশে মুরুব্বিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আমাদেরকে আমাদের মুরুব্বীদের সার্বিক তত্ত্বাবধানের জন্য আরো সচেতন ও সক্রিয় হওয়া বর্তমান সমাজে সময়ের দাবী।
বছরে উন্নীত হয়েছে, ফলে আমাদের দেশে মুরুব্বিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আমাদেরকে আমাদের মুরুব্বীদের সার্বিক তত্ত্বাবধানের জন্য আরো সচেতন ও সক্রিয় হওয়া বর্তমান সমাজে সময়ের দাবী।
রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে একটু লক্ষ করলে দেখা যায়, বিভিন্ন যান বাহনে শিশু, মহিলা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ব্যবস্থা থাকলেও বৃদ্ধদের জন্য কোন আসন রাখা হয়নি। শহরের ছুটে চলা জীবনে তারা কতটা অসহায় তা সহজে অনুমান করা যায় রাস্তায় বের হলে। সরকার বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করায় হয়তো কিছু সংখ্যক প্রবীন মানুষ কিছুটা সুবিদা পান, যাহা বাস্তবে পর্যাপ্ত নয়। প্রবীনরা নিজেদের অক্ষমতা প্রদর্শণ করেন নানা ভাবে। সরকারী ভাবে সরকারী হাসপাতাল বৃদ্ধদের চিকিৎসায় বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা থাকা সত্বেও শুধুমাত্র সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় বাংলাদেশের অনেক প্রবীণ সেই সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন না । এ ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রচারণার বিষয়টি আরও জোরদার করা আবশ্যক।
বর্তমান প্রেক্ষাপ্রটে আমাদের সমাজ জীবনে যৈাথ পরিবারের ভাঙ্গণ দেখা দেওয়ায় প্রবীণদের নিরাপদ জীবণের বিষয়টি এক ধরণের অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কিছু কিছু অঞ্চলের প্রবীনরা অর্থিক ভাবে সচ্ছল হওয়া সত্যে ও বিভিন্ন জঠিল রোগে আক্রান্ত হন, যেমন হদরোগ, ক্যানসার, ডায়াবেটিস ইত্যাদি। তাদের চিকিৎসার জন্য সার্মথ্য থাকলেও তাদের জীবনে একাকিত্ব তাদের সুস্থ করতে বিলম্বিত করে। এছাড়া বয়স বাড়ার সাথে সাথে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রবীনদের দৃষ্টি কমতে থাকায় বিভিন্ন সময় তারা চলাফেরা করতে পারেন না বা গুরুতর আঘাত পান।
বৃদ্ধ বয়সে আমাদের মুরুব্বীদের যখন পরিবারের অন্যান্য সদস্যের উপর তাদের নির্ভরতা বাড়তে থাকে। মানসিক চাহিদা অনুপাতে সময় দিতে না পারায় বিভিন্ন সময় পরিবারের নবীণ ও প্রবীণদের মধ্যে এক ধরণের মনোমালিণ্য দেখা দেয়। তখন অনেক সময় দেখা যায় কোন কোন মুরুব্বীকে বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিতে হয়। কিন্তু সেখানে কি প্রবীনেরা ভালো থাকতে পারেন ? সন্তানকে ছাড়া বৃদ্ধ পিতামাতা ভালো থাকতে পারেন না । কিন্তু তবুও তাদের থাকতে হচ্ছে।
হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হইতে বর্নিত- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “আমার উম্মতের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, আমার বুজুর্গ ও শ্রেষ্ঠত্ত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অন্তরভূক্ত”
“যদি কোন যুবক, কোন বৃদ্ধকে বার্ধক্যের কারনে ইজ্জত-সম্মান করে, তবে মহান আল্লাহ্ সুবহানাহু তায়ালা ওই যুবকের বৃদ্ধাবস্থায় এমন একজনকে নিয়োগ দিবেন, যে তাকেও ইজ্জত সম্মান করবে” (মিশকাত শরিফ, ৪২৩ পৃষ্টা)
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “যাবতিয় কল্যাণ ও মঙ্গল বয়োবৃদ্ধদের সাথেই রয়েছে” (বায়হাক্বী, শুয়াবুল ঈমান, ৮ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১৪৯)
উপরোল্লেখিত হাদিসের আলোকে আমরা আমাদের নিজেদের মঙ্গলের জন্য ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসার নিমিত্ত্বে, আমাদের মুরুব্বীদেরকে সঠিক সম্মান প্রদর্শন করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। এবং আমাদের সমাজেও আমরা এমন ভাবে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে, যাতে করে আমাদের দেশের, সমাজের ও পরিবারের কোন মুরুব্বীকে কোন বৃদ্ধাশ্রমে যেতে না হয় এবং কোন প্রকার অবহেলায় মানসিক কষ্ট না পায়।
আমরা আমাদের নিজেদের সার্বিক মানসিকতায় সব সময় খেয়াল রাখবো যে- অর্থনৈতিক মাপকাঠিতে নয়, অভিজ্ঞতার দৃষ্টিতে আমাদের প্রিয় মুরুব্বীগন সব সময় আমাদের কাছে শ্রদ্ধেয় ও সম্মানের অধিকারী হয়ে থাকবেন এবং এটাই আমাদের সুস্থ ইসলামী সমাজের জন্য কাম্য হওয়া চাই যাতে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন ও আমাদের প্রিয় নবী রাহমাতুল্লিল আলামিন আমাদের উপর খুশি থাকেন।