লেখায় ------ আ স ম আহসান উল্লাহ আব্দুল্লাহ
বাব মায়ের জন্য দোয়া --- রাব্বির হাম-হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি ছাগিরা।
সন্তানদের জন্য দোয়া --- রাব্বি হাবলি মিনাস সালেহিন।
দোয়া বা মুনাজাত কি? ----- নিজের মনের আশা/অভিলাষ/অভাব/অভিযোগ ইত্যাদি পুরণের জন্য প্রকাশ্যে বা গোপনে মানুষ মহান আল্লাহর কাছে যে প্রার্থনা করে থাকে তাই দোয়া বা মুনাজাত নামে পরিচিত।পবিত্র কুরাআন শরীফে আল্লাহ পাক এরশাদ করেছেন, ‘‘তোমরা আমার নিকট দোয়া কর, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব’’। হাদীস শরীফে আছে, “দোয়া হচ্ছে ইবাদাতের মগজ বা সার বস্তু।”
দোয়া করার আবশ্যকতাঃ ----- দোয়া করা একটা ইবাদাত।এতে মনের আশা পূর্ণ হয়, মনের বোঝা হালকা হয়। দোজাহানের কল্যাণ লাভ করা যায়।ফলে জীবনে সুখ শান্তি লাভ করা সহজ হয়ে যায়।পবিত্র হাদীস শরীফে আছে, “প্রত্যেকেরই মহান আল্লাহ পাকের দরবারে নিজ নিজ মাকসুদ হাসিলের জন্য সওয়াল করা আবশ্যক।জুতা বা সেন্ডেলের ফিতা ছিঁড়ে গেলেও তার জন্য, এমনকি লবনের জন্য (অর্থাৎ অতি সামান্য বস্তুর জন্য হলেও) আল্লাহতায়ালার নিকট সওয়াল কর।”
পবিত্র হাদীস আরো শরীফে আছে, “তোমাদের মধ্যে যে সব ব্যক্তি নিজেদের জন্য দোয়ার দুয়ার খুলে দেয়, আল্লাহতায়ালা তাদের জন্য রহমতের দরজা খুলে দেন।” যত রকম সওয়াল আল্লাহতায়ালার নিকট করা হয়, তম্মধ্যে আফিয়াতের (দুনিয়া ও আখিরাতের বিপদ হতে নিরাপত্তা লাভের জন্য দোয়া) জন্য সওয়াল করা আল্লাহতায়ালার নিকট অধিক প্রিয়।
দোয়ার আদবঃ ---- মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে হাকীমে এরশাদ করেন, “হে রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আপনি বলে দিন, তো্মরা চাই আল্লাহ্ নামে ডাকো, চাই রহমান নামে ডাকো, যে নামেই ডাকো না কেন, বস্তুতঃ তাঁর অনেক উত্তম উত্তম নাম সমুহ রয়েছে। আর আপনি নামাজে না অতি উচ্চস্বরে পড়বেন, আর না একেবারে চুপি চুপি পড়বেন।বরং উভয়ের মধ্যে মধ্য পন্থা অবলম্বন করবেন।”
মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে হাকীমে আরও এরশাদ করেন, “তোমরা আপন প্রভূ সকাশে দোয়া বা মুনাজাত করতে থাক, অতি বিণীতভাবে এবং চুপি চুপি। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহতায়ালা সীমা অতিক্রমকারীদেরকে (যারা দোয়া বা মুনাজাতের মধ্যে আদব বজায় রাখে না) ভালবাসেন না। আর ভূপৃষ্ঠে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করিও না, এর সংস্কারের পর। আর তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর ভয় ভীতি ও আশা-ভরসা সহকারে। নিশ্চয় আল্লাহর রহমত সৎ কর্মশীলদের সন্নিকটে”।
দোয়া বা মুনাজাতের সময় কাবা ঘরের দিকে মুখ ফিরানো আবশ্যকীয় নয়ঃ
দোয়া বা মুনাজাত করার সময় কাবা ঘরের দিকে মুখ করা শর্ত নয়। বরং নামাজের পর মুক্তাদিদের দিকে ঘুরে বসাই ইমামের জন্য সুন্নত।আর কবর জি্যারতের সময় কবরবাসীর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বা বসে মুনাজাত করা শরীয়ত সম্মত ও অতি উত্তম আমল।
দেখা যায়, অনেকে কবর জিয়ারত শেষে মুনাজাতের পূর্বে খানায়ে কাবার দিকে মুখ করে দাঁড়ায়।বরং উত্তম তরীকা হলো, কবরকে সামনে নিয়ে মুনাজাত করা।কারন খানায়ে কাবা দোয়া-মুনাজাতের কিবলা নয়।মুনাজাতের কিবলা হলো আসমানের দিকে।আর নামাজ ও জবেহের কিবলা হলো খানায়ে কাবা। দোয়া-মুনাজাতকালে আসমানের দিকে হাত উঠিয়ে যে কোন দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বা বসে বান্দা আল্লাহর দববারে দোয়া করতে পারে। তাই দোয়া বা মুনাজাতের সময় কাবা ঘরের দিকে মুখ না ফিরালেও কোন সমস্যা নেই।
মহান আল্লাহ্ পাক সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সুরা বাকারায় এরশাদ করেন, ‘‘যে দিকেই তোমরা মুখ কর, সেই দিকেই আল্লাহ্ বিদ্যমান”। প্রিয় নবীজী’র (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)পবিত্র রওজা শরীফ জিয়ারতকালে যে কোন ব্যক্তি নুর নবীজী’র (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পবিত্র রওজা মুবারাকের দিকে মুখ করে দাঁড়াবে। এটাই হচ্ছে নুর নবীজী’র (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পবিত্র রওজা শরীফ জিয়ারতের তরীকা বা নিয়ম।
দোয়া বা মুনাজাতের নিয়মঃ ---- দোয়া করার আগে কয়েক বার তাওবা-ইস্তেগফার এবং দরুদ শরীফ পড়া ভাল।দোয়া বা মুনাজাতের প্রথমে পড়বেন, “আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন, ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিহিল কারীম”। তারপর নিজের হাজত পেশ করবেন এবং নিম্ন লিখিতভাবে দোয়া শেষ করবেনঃ
“রাব্বানা তাকাব্বাল মিন্না আনতাস সামিউল আলীম।ওয়াতুব আলাইনা ইন্নাকা আন তাত তাওয়াবুর রাহীম।ওয়া সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলা খায়রি খালকিহি ওয়া নুরি আরশিহি সাইয়েদিনা মুহাম্মাদিন ওয়া আলিহি ওয়া আসহাবিহি আজমাঈন। বিফাদলি সুবহানা রাব্বিকা রাব্বিল ইজ্জাতি আম্মা ইয়াসিফুন।ওয়া সালামুন আলাল মুরসালিন, ওয়ালহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন, বি হাক্কি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্”।
নুর নবীজী’র (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শেখানো দোয়াঃ --- হযরত আবু ইমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘‘রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে এত অধিক সংখ্যক দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন, যেগুলি স্মরণ রাখা আমাদের পক্ষে খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। তাই আমরা আরজ করলাম, ‘‘হে রাসুলুল্লাহ্! আপনি আমাদিগকে অনেক দু’আ শিক্ষা দিয়েছেন, কিন্তু আমরা এর সবগুলি স্মৃতিপটে সংরক্ষণ করতে পারি নাই’’। তখন রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘‘আচ্ছা আমি তোমাদিগকে এমন একটা দু’আ শিখিয়ে দিচ্ছি, যার মধ্যে ঐ সকল দু’আ অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। তোমরা এই দু’আখানি পাঠ করিও।’’ “আল্লাহুম্মা ইন্না আসআলুকা মিন খাইরি মা সা’লাকা মিনহু নাবিয়্যুকা মুহাম্মাদুন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা, ওয়া নায়ুযু বিকা মিন শাররি মাসতায়াজা মিনহু নাবিয়্যুকা মুহাম্মাদুন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা, ওয়া আনতাল মুসতায়ানু, ওয়া আলাইকাল বালাগু, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহি।” বাংলা অর্থ- “হে আল্লাহ্!আমরা আপনার নিকট ঐ সকল কল্যাণের প্রার্থনা করিতেছি, যা রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রার্থনা করেছেন। আর ঐ সকল মন্দ বিষয় হতে আশ্রয় প্রার্থনা করিতেছি, যা হতে আপনার মনোনীত রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। আপনারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করিতেছি এবং সকল অভাব আপনার পক্ষ হইতেই পূর্ণ হয়। আর গুনাহসমুহ থেকে বাঁচার শক্তি এবং নিয়মানুবর্তীতার সাথে নেক কর্ম করার তাওফিক তথা সামর্থ্য একমাত্র আপনার পক্ষ হতেই প্রদত্ত হয়।”
কাব্যানূবাদঃ
ওগো পরম দয়ালু আল্লাহ!
তব সকাশে আমি চাই তা',
তোমার কাছে চেয়েছেন যা
মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
তব আশ্রয় মাগি ঐ-সব ব্যাপারে,
যা কিছুর আশ্রয় চাইতেন নবীজী তব দ্বারে।
সাহায্য চাই আমি তব সকাশে,
সকল অভাব পূ্র্ণ হ্য় তব পক্ষ থেকে,
পাপ কাজ থেকে বাঁচার শক্তি
সৎ কাজ করার সামর্থ,
হ্য় তব পক্ষ থেকে হ্য় প্রদত্ত,
হে আল্লাহ! তোমার ক্ষমতা সর্বত্র।
সুরা ফালাক ও সুরা নাস পাঠের ফযীলতঃ ---- হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘‘একবার রাসুলুল্লাহ্ কে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিচ্ছু দংশন করলে তিনি পানির সাথে লবন মিশ্রিত করলেন এবং সুরা কাফিরুন, সুরা ফালাক, ও সুরা নাস পাঠ করতে করতে ক্ষতস্থানে পানি লাগালেন। সূত্রঃ- মাযহারী, তফসীর মাআরেফুল ক্বোরআন পৃঃ ১৪৭৯।
ইহুদীদের মিত্র মুনাফিক লবীদ ইবনে আসাম, ওলীদের কন্যাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নুর নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে তাঁর এক খাদেমের সহায়তায় যাদু করেছিল। ওলীদ এহেন কুকর্মের আদেশ দাতা।
সূত্রঃ- সুরা ফালাক ও সুরা নাস, তফসীর মাআরেফুল ক্বোরআন পৃঃ ১৪৮৪-৮৫।
হযরত বিবি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘‘রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোন রোগে আক্রান্ত হলে সুরা ফালাক ও সুরা নাস পাঠ করে হাতে ফুঁ দিয়ে সবাঙ্গে বুলিয়ে নিতেন। ইন্তেকালের পূর্বে যখন তাঁর রোগ যন্ত্রনা বৃদ্ধি পায়, তখন আমি এই সুরাদ্বয় পাঠ করে তাঁর হাত মুবারাকে ফুঁক দিতাম। অতঃপর তিনি নিজে তা সর্বাঙ্গে বুলিয়ে নিতেন।আমার হাত তাঁর হাত মুবারাকের বিকল্প হতে পারতো না। তাই আমি এরূপ করতাম’’। - ইবনে কাসীর। তফসীর মাআরেফুল ক্বোরআন- পৃঃ ১৪৮৫।
দোয়ায়ে দফে ওবাঃ ---- লী খামসাতুন উতফি বিহা হাররুল ওবায়িল হাতিমাহ,
আল মুস্তাফা ওয়াল মুরতাজা ওয়াবনাহুমা ওয়াল ফাতিমাহ”।
অর্থ- আমার জন্য ও একটা পঞ্চক রয়েছে,
তাঁদের সাহায্যে আমি ওলা ওঠা, বসন্ত প্রভৃতির ন্যায়
মহামারীর জলন্ত আগুনকে ফুৎকারে নির্বাপিত করে থাকি,
তাঁরা হচেছন – ‘ হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত আলী মুতাজা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা, হযরত বিবি ফাতিমাহ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা, হযরতহাসান রাদিয়াল্লাহু তায়ালাও হোসেন (রাদিঃ)’
দোয়ায়ে নাদে আলীঃ ----- “ নাদে আলীয়ান মাযহারুল আজাঈবে তাজিদাহু আওনান লাকা ফিন নাওয়াইবি, কুল্লু হাম্মিন ওয়া গাম্মিন সাইয়ানজালী বি নুরিকা ইয়া মুহাম্মদ, ওয়া বি বিলায়াতিকা ইয়া আলী! ইয়া আলী! ইয়া আলী! আদরিকনী।