শনিবার, ৩ নভেম্বর, ২০১২

আত্নার সাথে জিহাদ করাই হলো - আল্লাহ’র সন্তুষ্টির জন্য সর্বোত্তম জিহাদ


---আ স ম আহসান উল্লাহ আব্দুল্লাহ


 জিহাদ শব্দের বাংলা অর্থ চেষ্টা, যাহা পরিশ্রম, অধ্যাবসায়, প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা ইত্যাদি শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থে ব্যবহৃত হয়। জিহাদ সম্পর্কে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু তায়ালা পবিত্র কুরানে বলেছেন- “তোমরা আল্লাহ’র পথে জিহাদ কর এবং জেনে রেখ যে আল্লাহ্‌ সর্ব শ্রোতা ও সর্বজ্ঞ” (সুরা বাকারা, আয়াত-২৪৪)

ঈমান আনার পর প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উপর নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত ফরজ করা হয়েছে, ঠীক এই পাঁচ ফরজের পরবর্তি ফরজ হল জিহাদ। পবিত্র কুরানে কালামে- তাওহীদের পরেই সবচেয়ে বেশী আলোচনা হয়েছে জিহাদ বিষয় নিয়ে।

জিহাদ নিয়ে আমাদের দেশে অনেকে নিজের মতো করে  ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে। তবে যে যাহাই বলুক না কেনো, কিছু সংখ্যক বিজ্ঞ আলেমদের সাথে একমত পোষন করে আমি মনে করি- জিহাদ মুলত পাঁচ
ভাগে বিভক্ত -১) আত্নার সাথে জিহাদ, ২) শারিরিক জিহাদ, ৩)আর্থিক জিহাদ, ৪) ইলম ও জ্ঞান চর্চার জিহাদ, ৫) অনৈসলামিক বা অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে জিহাদ। তার মধ্যে সর্বোত্তম জিহাদ হলো নিজের আত্নার সাথে জিহাদ করা।

আত্নার সাথে জিহাদ করা মানে হলো- ব্যক্তি জীবনে দুনিয়াবি সকল সুখ-বিলাসিতার প্রতি আশক্ত না
হয়ে মহান আল্লাহ্‌ সুবহানাহু তায়ালার সন্তুষ্টির প্রতি খেয়াল রেখে পরকালের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার সার্বিক চেষ্টা। মানুষ যখন দুনিয়ার বিলাসিতার চিন্তা বাদ দিয়ে, আখেরাতের চিন্তায় মশগুল হয়, তখন তার অন্তরে আল্লাহ’র প্রতি ভয়-ভিতি সৃষ্টি হয়, আর আল্লাহ’র প্রতি ভিতি থাকাই হলো আল্লাহ’র সন্তুষ্টি অর্জনের উত্তম পন্থা। মহান আল্লাহ্‌ তায়ালা পবিত্র কুরানে বলেন- “যারা আমার সন্তুষ্টির জন্য যথা সাধ্য চেষ্টা করে, আমি তাদের জন্য আমার সন্তুষ্টি অর্জনের পথ গুলো উম্মুক্ত করে দেই” (সুরা আনকাবুত, আয়াত-৬৯) মিশকাত শরীফের হাদিসে জানা যায়- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন প্রকৃত মুজাহিদ সে ব্যক্তি, “যে নিজের আত্নার সাথে জিহাদ করে”। 

কাগজে-কলমে খুবই সুন্দর করে নীতি বাক্য লেখা যায়, অনেক ভালো ভালো নিয়ম-নীতি লিপিবদ্ধ করে রাখা যায়, কিন্তু বাস্তব জীবনে মেনে চলা অনেক কঠিন ব্যপার। মুসলমানদের জীবনে ইসলামিক নিয়ম নীতিকে উপেক্ষা করা দিন দিন ব্যধি আকারে দেখা দিচ্ছে। আজকের সমাজ যেনো দিন দিন ভোগ বিলাশের প্রতিযোগিতার এক রঙ্গ মঞ্চ। আত্ন জিহাদের মাধ্যমে আমরা, এই রঙ্গ মঞ্চ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, জীবনে অপচয় করা থেকে, আমরা নিজেকে সার্বক্ষনিক মুক্ত রাখার আপ্রান চেষ্টা চালাতে হবে।

একটি বিষয় একটু গভীর ভাবে খেয়াল করলে বুঝা যাবে যে, একবিংশ শতাব্দির এই মানব সভ্যতায় পূজিতান্ত্রিক গনতন্ত্র বহুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বিশ্বের অধিকাংশ সচেতন মানুষ পূজিতান্ত্রিক গনতন্ত্রকে ব্যক্তি, সামাজিক, ও রাষ্ট্রিয় শান্তির একমাত্র সোপান হিসাবে মূল্যায়ন করতে শুরু করেছে। সমাজে অশান্তি, অন্যায়, আর অপরাধ প্রবনতা বৃদ্ধিতে, ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রীয় দারিদ্রতাকে দায়ী করেন। এমন কি এই পূজিতান্ত্রিক গনতন্ত্রকে বিশুদ্ধ প্রমানের জন্য বিশ্ব মিডিয়াকে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফলে আজকের অধিসংখ্যক আলেম উলামায়ে কেরাম পুজিবাদিদের সাথে তালে তাল মিলিয়ে যাচ্ছেন এবং মনে করা হচ্ছে একবিংশ শতাব্দিতে ইসলামকে বিজয়ী করতে হলে, এই পুজিবাদের গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি তাদের জন্য প্রথম শর্ত। তাই তারা আত্না বা প্রবৃত্তির জিহাদকে, বিভিন্ন কৌশলে প্রত্যাখ্যান করে হেকমতের স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন। যাহা আমাদের পালন কর্তা মহান আল্লাহ’র এবং পেয়ারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্তুষ্টির কারন হতে পারেনা। কারন মহান আল্লাহ্‌ সুবহানাহু তায়ালা বলেছেন- “মহান আল্লাহ্‌ যাহা তোমাকে দিয়েছেন, তাহা দ্বারা পরলোকের কল্যাণ অনুসন্ধ্যান কর” (সুরা-২৮, আয়াত-৭৭)। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- তোমরা পরকালের জন্য আমল কর এই কল্পনা করে যে আগামি কালই তোমাকে মৃত্যুবরন করতে হবে। সুতারাং মুসলমান হিসাবে আমাদেরকে ভাবতে হবে, বুঝতে হবে- আমরা আমাদের ব্যক্তি, সামাজিক, রাষ্ট্রিয় জীবনে, দৈনিক সকল কার্যক্রমে আল্লাহ’র জন্য, নিজের আত্নার সাথে কতটুকু জিহাদ করতে পেরেছি।

অনেক হয়তো ভাবতে পারেন যে, তাহলে কি আমরা আমাদের অর্থ-সম্পদ কামাই করা ছেড়ে দিবো, আমরা কি সব সময় দারিদ্র ভাবে জীবন যাপন করবো? না এটা হতে পারে। আমিও বলি তা হতে পারেনা, আর ইসলামিক নিয়ম অনুসরন করলে কেঊ দরিদ্র হয়না। ইসলামে যেমনি ভাবে অতি অপচয়কে প্রাধান্য দেয়না, তেমনি ভাবে বৈরাগ্যকেও সমর্থন করেনা। ইসলামিক নিয়মে আমরা জীবনের সার্বিক ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অনুস্নরন করতে হবে।

তাই আসুন, সমস্ত ভোগ বিলাসকে না বলি। মহান আল্লাহ’র সন্তুষ্টির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করি। আমাদের জীবনকে সাধারনের জীবনের সাথে মিশিয়ে দেই। আল্লাহ’র দেওয়া সকল ধন-সম্পদের সুষ্ট ব্যবহার করি, কারন আল্লাহ’র দেওয়া সকল সম্পদ আমাদের কাছে আমানত স্বরূপ। আমরা আমাদের সম্পদের প্রতিনিধি হিসাবে তার সুষ্ট বন্টন করা আমাদের একান্ত দায়িত্ব। আমরা যদি আমাদের দায়িত্বের অবহেলা করি তবে কাল কেয়ামতে মহান আল্লাহ’র কাছে জবাব দেওয়ার পথ থাকবেনা। যখন আমাদের আত্না আমাদের কোন ভোগ বিলাসের লোভ করবে, তখন আমরা একমাত্র আল্লাহ্‌ ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্তুষ্টির জন্য নিজের আত্নার সাথে জিহাদ করবো, নিজের প্রবৃত্তির সাথে জিহাদের জন্য ও আখেরাতের জন্য নিজেকে সবসময় নিয়জিত রাখতে পারলে অবশ্যই আমরা পার্থিব জীবনে ও আখেরাতে কামিয়াব হবো ইনশাল্লাহ, এবং এটাই হবে মহান আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য সর্বোত্তম জিহাদ।