বুধবার, ২৭ জুন, ২০১২

কুরআন-হাদীছের আলোকে শবে বরাত - পর্ব ১৭


بسم الله الرحمن الرحيم
হাদীছের আলোকে শবে বরাত - ৯
গত কয়েক পর্বে আমরা শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কিত মোট দশটি হাদীস উল্লেখ করে সেগুলোর কয়েকটিকে সহীহ বা হাসান প্রমাণ করেছিলামযদি শবে বরাতের ফযীলতের ব্যাপারে আর কোন হাদীস না থাকত, তবে এই হাদীসগুলোই এ রাতের ফযীলত সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এবং এ রাতে মাগফেরাতের উপযোগী নেক আমলের গুরুত্ব প্রমাণিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট হত
এই পর্বে আমরা আরও একটি হাদীস সম্পর্কে আলোচনা করব এবং সাথে সাথে এই হাদীস সম্পর্কে মুহাদ্দিসীনদের মতামত পর্যালোচনা করব

একাদশ হাদীছ( اسناده ضعيف لكن ليس فيه كذاب )
হযরত আলী ইবনু আবি তালিব (রঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সঃ) ইরশাদ করেছেনঃ শাবান মাসের পনের তারিখ রাত আসলে তখন তার রাতের অংশে ইবাদত করো এবং দিনের অংশে রোজা রাখোকারণ ওই রাতে সূর্যাস্ত যাওয়ার পর মহান আল্লাহ প্রথম আসমানে অবতরণ করে বলতে থাকেন, আছো কি কোন মাগফিরাতের প্রত্যাশী? তাকে আমি
মাগফিরাত দান করবোআছো কি কোন রোগাক্রান্ত ব্যক্তি তাকে আমি সুস্থতা দান করবোআছো কি অমুক আছো কি অমুক - এভাবে প্রভাতের সূচনা পর্যন্ত ডাকতে থাকেন

উক্ত হাদীছটি
ইবনে মাজাহ তাঁর সুনানে
ইমাম বায়হাকী তাঁর শুয়াবুল ঈমানে
মুনযিরী তাঁর তারগীব ওয়াত তারহীবে
সংকলন করেছেন

হাদীছটির অবস্থানঃ
উল্লেখিত বিবরণ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত হাদীছটিতে ابن أبى سبرهইবনু আবি সবুরাহ নামে জনৈক রাবী ব্যতীত অন্যান্য সকল রাবী নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্তসুতরাং হাদীছটিকে বড় জোর যঈফ বলা যেতে পারেকোন কোন মুহাদ্দিছ ইবনু আবি সবুরাহকে জাল হাদীছ রচনাকারী বলেছেন বিধায় হাদীছটিকে জাল বলা যাবে নাকারণ তিনি জাল হাদীছ রচনাকারী কথাটি সঠিক নয়তাঁর সম্পর্কে বিশুদ্ধ ও চূড়ান্ত রায় সেটাই যা হাফিয যাহাবী সূত্রে আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি যে, স্মৃতি শক্তির দুর্বলতার কারণে তিনি যঈফ রাবী ছিলেন
এই কারণেই ইমাম যুরকানী হাদীছটি সম্পর্কে মন্তব্য করেন যে, যদিও তার সনদ দুর্বল কিন্তু তার রাবীগণ মিথ্যুক নন, কিংবা জাল রচনাকারী ননসর্বোপরি তার সমর্থনে আরো হাদিছ পাওয়া যায় বিধায় হাদীছটির ভিত্তি রয়েছে
যেমন শারহুল মাওয়াহিবিল লাদুনিয়া (৭/৩১২) তে এসেছেঃ
সুনানে ইবনু মাজাতে আলী (রঃ) থেকে মারুফ হিসেবে যঈফ সনদ দ্বারা হাদীছটি উল্লেখ হয়েছেতেমনিভাবে আল মুনযিরী ও হাফিয আল ইরাকী তাঁর দুর্বলতার কারণ উল্লেখ করতঃ নিশ্চয়তার সাথে বলেছেনকিন্তু হাদীছটির মধ্যে কোন মিথ্যুক ও জাল হাদীছ রচনাকারী নেই এবং তার সমর্থনে আরো হাদীছ আছে যা তার ভিত্তি আছে বলে প্রমাণ করে
অনুরূপ ভাবে আল্লামা ইরাকীও হাদীছটিকে দুর্বল বলেছেন ঠিক কিন্তু জাল বলেন নিতাঁর ভাষায়ঃ
শবে বরাতের ফজীলত ও আমল সম্পর্কীয় যে হাদীছ আলী (রঃ) সূত্রে ইবনু মাজাহতে রয়েছে তার সনদ দুর্বল
মোট কথা, হাদীছটি একজন রাবীর কারণে দুর্বল তবে তার ভিত্তি রয়েছে অন্যান্য হাদীছের সমর্থন পাওয়া যাওয়ায় তার উপর আমল করা যাবে

সার কথাঃ
ইবনু আবি সবারাহ নামক একজন রাবী থাকায় আহলে হাদীস/সালাফীদের কিছু আলেম হযরত আলী (রঃ) এর এই হাদীসটিকে জাল বলার চেষ্টা করে থাকেনকিন্তু কথাটি সঠিক নয়হাদীসটি শুধুমাত্র দুর্বলএ কারণেই আল্লামা ইরাকী, ইমাম আল মুনযিরী, ইমাম যুরকানীর মত বিজ্ঞ মুহাদ্দিসরা এই হাদীসটি জাল বলেন নি, শুধুমাত্র দুর্বল বলেছেনঅনেক বড় বড় বুজুর্গরা এই হাদীসটি তাদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন এবং এর উপর আমল করা যাবে বলে মত প্রকাশ করেছেনযেহেতু হাদীস শাস্ত্রের মূলনীতি অনুযায়ী কোন রাবীর সমালোচনা গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য শুধুমাত্র দুর্বল বা মিথ্যক, এতটুকু উল্লেখ থাকলেই হয় না, বরং এর স্বপক্ষে কারণসহ পর্যাপ্ত পরিমাণ দলীল-প্রামাণাদি থাকা আবশ্যক, সেহেতু যারা এই রাবীকে মিথ্যুক বা জাল হাদীস রচনাকারী বলে থাকেন, তারা দয়া করে প্রমাণ দেখিয়ে যাবেন কেন তিনি মিথ্যুক বা জাল হাদীস রচনাকারী