বুধবার, ২৭ জুন, ২০১২

কুরআন-হাদীছের আলোকে শবে বরাত - পর্ব ১১


بسم الله الرحمن الرحيم
হাদীছের আলোকে শবে বরাত - ৩
গত পর্বে আমরা শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কিত একটি হাদীস উল্লেখ করে সেটি সহীহ প্রমাণ করেছিলামযদি শবে বরাতের ফযীলতের ব্যাপারে দ্বিতীয় কোন হাদীস না থাকত, তবে এই হাদীসটিই এ রাতের ফযীলত সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এবং এ রাতে মাগফেরাতের উপযোগী নেক আমলের গুরুত্ব প্রমাণিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট হত
কিন্তু শবে বরাতের ফযীলতের ব্যাপারে আরও সহীহ বা হাসান হাদীছ বিদ্যমানএই পর্বে আমরা আরও একটি হাদীস সম্পর্কে আলোচনা করব এবং সাথে সাথে এই হাদীস সম্পর্কে মুহাদ্দিসীনদের মতামত পর্যালোচনা করব

দ্বিতীয় হাদীছ (الصحيح درجة فى حسن)
হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রঃ) থেকে বর্ণিত, হুযুর (সঃ) বলেছেনঃ শাবান মাসের পঞ্চদশ রজনীর আগমণ হলে মহান আল্লাহ পৃথিবীর আসমানে তাশরীফ আনেন এবং স্বীয় বান্দাদিগকে
মাফ করে দেনকিন্তু মুশরিক ও অপর ভাইয়ের সাথে হিংসা পোষণকারী ব্যতীত
উক্ত হাদীসটিঃ
ইমাম বায়হাকী তাঁর শুয়াবুল ঈমানে
ইমাম উকায়লী তাঁর যয়ীফা আল কাবীর
বাযযার তাঁর মুসনাদে
ইমাম মুনযিরী তাঁর তারগীব ওয়াত তারহীব
ইমাম হাইছামী তাঁর মাজমাউয যাওয়ায়েদে
ইবনে খোযাইমা তাঁর তাওহীদে
সংকলন করেছেন

হাদীছটি সম্পর্কে হাদীস শাস্ত্রবিদগণের অভিমতঃ
প্রথম অভিমতঃ
হাফিয যকী উদ্দীন আল মুনযিরী (মৃঃ ৬৫৭ হিঃ) বলেনঃ বাযযার ও বাইহাকী এই হাদীছটিকে لاباس به (সনদে কোন সমস্যা নেই) সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন
(
তারগীব ওয়াত তারহীবঃ খ-৪, পৃ-২৩৮ )
উল্লেখ্য মুহাদ্দিছগণ কোনো হাদীছের ক্ষেত্রে لاباس به বলার অর্থ হাদীছটি শক্তিশালী হওয়ার প্রতি নির্দেশক

দ্বিতীয় অভিমতঃ
হাফিয আল-হাইছামী বলেনঃ হাদীছটি বাযযার বর্ণনা করেছেনএর মধ্যে আব্দুল মালিক ইবনে আবিদিল মালিক নামক একজন রাবী (বর্ণনাকারী) আছে ইবনু আবি হাতিম যাকে جرح و تعديل জরাহ ওয়াত তাদীল (দোষ-ত্রুটি পর্যালোচনা) এ উল্লেখ করেছেনকিন্তু তাকে যঈফ তথা দুর্বল আখ্যা দেন নিতাছাড়া অবশিষ্ট অন্যান্য রাবী ছিক্বাহ তথা নির্ভরযোগ্য
(
মাজমাউয যাওয়ায়েদ )
বলা বাহুল্য, ইবনু আবি হাতিম যদি কোন রাবী এর দোষ-ত্রুটি পর্যালোচনার ব্যাপারে নীরবতা অবলম্বন করেন, তখন তার অর্থ হচ্ছে, রাবী নির্ভরযোগ্য তাই এই দৃষ্টিকোণে উক্ত হাদীছটির সকল রাবী ছিক্বাহ বা নির্ভরযোগ্য
এ প্রসঙ্গে قواعد فى علوم الحديث আল্লামা যফর আহমদ ওছমানী (রহঃ) বলেনঃ

তাঁর অবদান এই যে, ইবনু আবি হাতিম কোনো রাবী এর দোষ-ত্রুটি পর্যালোচনা করার ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকার অর্থ দাঁড়ায় ওই রাবী ছিক্বাহ ও নির্ভরযোগ্যঠিক ইমাম বুখারী (রহঃ) এর নীরবতা অবলম্বন করার মতো
(
ক্বাওয়ায়িদ ফী উলূমিল হাদীছঃ পৃ-৩৫৮ )

তৃতীয় অভিমতঃ
হাফিয ইবনু আদী আল জুরজানী (মৃঃ ৩৬৫) বলেনঃ আমি ইবনু হাম্মাদকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেনঃ ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেছেন, আব্দুল মালিক ইবনু আবদিল মালিক মুসআব ইবনু আবি যিব থেকে আর তার (আব্দুল মালিক ইবনু আবদিল মালিক) থেকে আমর ইবনু হারিস এর বর্ণনা করার বিষয়টি বিবেচনার বিষয়। (অতঃপর হাফিয ইবনু হাদী আল জুরজানী বলেন) আবদুল মালিক ইবনু আবদিল মালিক হাদীছটির সাথে মারূফমর বিন হারিস ব্যতীত উক্ত হাদীছটি আবদুল মালিক থেকে আর কেউই বর্ণনা করে নিআর হাদীছটি এই সনদের সাথে মুনকার

উক্ত অভিমতের পর্যালোচনাঃ
ইমাম বুখারী (রহঃ) আবু বকর সিদ্দীক (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত এই হাদীছটির ব্যাপারে যে বলেছেন وفيه نظر তথা তার মধ্যে বিবেচনার বিষয় রয়েছে - এর দ্বারা মূল হাদীছটি সহীহ প্রমাণ হওয়ার ব্যাপারে কোন সমস্যা সৃষ্টি হয় না
উল্লেখ্য যে, ইমাম বুখারী (রহঃ) এ হাদীছের সূত্রকে وفيه نظر বলার মূল কারণ হলো عبد الملك بن عبد الملكনামক রাবী তাঁর দৃষ্টিতে দুর্বল হওয়ার দরুণ, অন্যথায় এ হাদীছের সূত্রের অন্য কোন রাবীর ব্যাপারে কারো কোন আপত্তি নেই
আর উপরোক্ত আলোচনায় স্পষ্ট হলো যে, عبد الملك بن عبد الملك সম্পর্কে ইমাম আবু হাকিম দুর্বল এ জাতীয় কোন মন্তব্য করেন নি

তদুপরী যেহেতু হাদীছটির সমর্থনে আরো অনেক হাদীছ পাওয়া যায় বিধায়, যেমনঃ ক) মুআয ইবনে জাবাল (রঃ) খ) আবু ছালাবাহ (রঃ) গ) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রঃ) ঘ) আবু মূসা আশআরী (রঃ) ঙ) আবু হুরায়রা (রঃ) চ) হযরত আয়েশা (রঃ) প্রমুখ সাহাবীদের এর সমর্থনে হাদীছ পাওয়া যায় হাদীছটি অতএব উসূলে হাদীসের নীতিমালা অনুযায়ী অন্য হাদীছের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে শক্তিশালী হয়ে উঠেঅতএব যঈফ বলার অবকাশ নেই

তেমনিভাবে ইবনু হাদী হাদীছটিকে মুনকার আখ্যা দেয়ার দ্বারা হাদীছটি যঈফ হয়ে যায় নাকারণ পূর্ববর্তী মুহাদ্দিছগণের মতে একক রাবী (تفردراوى) এর কারণে হাসান এবং সহীহ হাদীছকেও মুনকার আখ্যা দেয়া যায়আর ইবনু আদী প্রমুখ পূর্ববর্তী মুহাদ্দিসগণের দলভুক্ততাই তিনি নিছক একক রাবী পাওয়া যাওয়ার ভিত্তিতেই হাদীছটি মুনকার বলে দিয়েছেনসুতরাং ইবনে আদীর উক্তিতে যে মুনকার বলা হয়েছে তা মূলত মুনকার দুর্বল হাদীছের অন্তর্ভুক্ত নয়
যেমনঃ الرفع والتكميل فى الجرح والتعديل নামক গ্রন্থে রয়েছেঃ
কোন রাবী এর রেওয়ায়েতের ক্ষেত্রে কামিল এবং মীযান প্রভৃতিতে মুনকার শব্দ পাওয়া গেলেই তাকে তাড়াহুড়া করে যঈফ বলে রায় দিয়ে ফেলো নাকারণ তারা হাসান এবং সহীহ হাদীছেও শুধুমাত্র একক রাবী পেলেই যঈফ হিসেবে রায় দিয়ে ফেলেনআর মুতাকাদ্দিমীন তথা পূর্ববর্তীগণের এবং মুতাআখখিরীন তথা পরবর্তীগণের وهذا حديث منكر (এটি মুনকার হাদীছ) বলার মাঝে পার্থক্য করা উচিতকারণ পূর্ববর্তীগণ অধিকাংশ সময় কেবলমাত্র একক রাবী পেলেই মুনকার এর রায় দিয়ে দেনযদিও হাদিছটি ছিকাহ রাবী থেকে বর্ণিতপক্ষান্তরে পরবর্তীগণ মুনকার এর রায় এমন দুর্বল রেওয়ায়েতের ক্ষেত্রে প্রদান করেন যে রেওয়ায়েত ছিক্বাহ রাবী এর রেওয়ায়েতের সাথে সাংঘর্ষিক
(
উল্লেখ্য, যারা ইবনু হাদীর মতানুসারে হাদীসটিকে যঈফ বলে থাকেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, শুধুমাত্র একক রাবীর জন্যই যদি হাদীসকে যঈফ বলা হয়, তাহলে তো সিহাহ সিত্তাহ থেকে শুরু করে অনেক হাদীসগ্রন্থের অনেক সহীহ ও হাসান হাদীসও আপনাদের দৃষ্টিতে দুর্বল হয়ে যাবেমূলত মুনকার বলার ক্ষেত্রে পূর্ব যুগের মুহাদ্দসিনের রায় আর পরবর্তী মুহাদ্দিসিনের রায়ের মধ্যে পার্থক্য আছেতাই উসূলে হাদীসের নীতিমালা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে তার পর মন্তব্য করা উচিত।)

চতুর্থ অভিমতঃ
ইমাম উকায়লী (রহঃ) আলোচ্য হাদীছটিকে তার الضعفاءالكبير গ্রন্থের বিবরণ তুলে ধরে মন্তব্য করেন যে,পঞ্চদশ শাবান রজনীতে আল্লাহতাআলা দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন মর্মে যেসব হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তার মধ্যে لين তথা কিছু কমজুরী রয়েছেতবে প্রত্যেক রাতে আল্লাহ তাআলার অবতরণের কথা বহু সহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিতকাজেই মধ্য শাবানের রজনীতেও মহান আল্লাহর অবতরণের বিষয়টি এসব সহীহ হাদীছেরই অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত
(
যয়ীফা আল কাবীরঃ খ-১, পৃ-২৯)
সুতরাং নুযুলে রবের হাদীছ দ্বারা হাদীছে আবী বকরের পূর্ণ সমর্থন পাওয়ায় হাদীছটি শক্তিশালী হয়ে উঠায় মূল হাদীছকে সহীহ বলতে হবে

পঞ্চম অভিমতঃ
ইমাম তাবরানী (রহঃ) তার স্বীয় ( المعجم الكبير ) গ্রন্থে হাদীছটিকে উল্লেখ করার পর এ কিতাবের মুহাক্কিক বলেনঃ
এ হাদীছটি বহু সূত্রে বর্ণিতযারা এ ব্যাপারে অবগত আছে তাদের দৃষ্টিতে নিঃসন্দেহে এটি সহীহ বলে সাব্যস্তবিশেষ করে যখন এ ব্যাপারে কয়েকটি হাদীছ حسن لذاتهতথা সহীহ সূত্রে প্রমাণিতযেমনঃ হযরত মুয়ায (রঃ) ও হযরত আবু বকর (রঃ) থেকে বর্ণিত হাদীছগুলো
(
মুজামুল কাবীরঃ খ-২০, পৃ-১০৮ )
এতে প্রমাণিত হয় যে, শবে বরাত সম্পর্কীয় হাদীছসমূহে হযরত মুয়ায ও আবু বকর থেকে বর্ণিত হাদীছগুলো সূত্রের দিক দিয়ে প্রত্যেকটি স্বতন্ত্রভাবে সহীহ বলে সাব্যস্ত

সার কথাঃ
হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত আলোচ্য হাদীছটি সহীহের অন্তর্ভুক্ত
হাফিয যকী উদ্দীন আল মুনযিরী
ইমাম তাবরানী
ইমাম উকায়লী
হাফিয আল-হাইছামী
প্রমুখ বড় বড় মুহাদ্দিসগণ হাদীসটির সহীহ হওয়াতে সত্যয়ন করেছেন

আহলে হাদীস/সালাফী ভাইদের কাছে প্রশ্ন ও দাওয়াতঃ
উপরে বর্ণিত হাদীসটির সনদ নিজে থেকেই হাসান বা সহীহ পর্যায়ের
দ্বিতীয়ত, হাদীসটির সমর্থনে আরও অনেক হাদীস থাকায় উসূলে হাদীসের নীতিমালা অনুযায়ী এই হাদীসটি সহীহের পর্যায়ে চলে আসে
অনেক বড় বড় মুহাদ্দিসরাই এই হাদীসের তাহকীক করেছেন এবং একে সহীহ বলেছেন
অন্যদিকে হাদীসের তাহকিক তথা বিচার বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে সালাফী/আহলে হাদীছ ভাইরা যার সবচেয়ে বেশি ভক্ত, যার কিতবাদি অনুবাদ করে আপনারা প্রচার করে থাকেন, সময়কালের বিশিষ্ট মুহাদ্দিছ নাসিরউদ্দীন আলবানীও (রহঃ) শবে বরাতের হযরত মুয়ায বিন জাবাল (রঃ) এর হাদীসকে সহীহ প্রমাণের সময় উপরোক্ত আবু বকর সিদ্দীক (রঃ) এর হাদীসটি নিয়ে এসে আলোচনা করেনএবং সবার শেষে সব হাদীসের সমর্থনে সহীহ বলে রায় প্রদান করেন
(
সিলসিলাতুস সাহিহাহর ৩ নং খন্ডের ১৩৫ নং পৃষ্ঠা )
তাই আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন, তাহলে কেন আপনারা বার বার বলেন যে, শবে বরাতের ফযীলত নিয়ে কোন সহীহ হাদীস বর্ণিত নেই ??
উপরন্ত আপনাদের জ্ঞাতার্থে আরও বলছি, আপনাদের সবচেয়ে বড় গণ্যমান্য ইমাম, শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ)ও শবে বরাতের ফজীলত সংক্রান্ত হাদীস গুলোকে তাহকীক করেছেন এবং এর ফযীলতকে স্বীকার করেছেনতিনি এই রাতে একাকী নফল নামায পড়ার পক্ষে একদল সালাফও ছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন

ইমাম ইবনে তাইমিয়্যার মত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আমার গত পর্ব দেখে আসতে পারেন
এখন সালাফী বা আহলের হাদীসের ঐসব বন্ধুদের প্রতি দাওয়াত রইল, আপনারা আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ), শায়খ আলবানী (রহঃ) এর গবেষণা ও সিদ্ধান্ত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেনআমি ওই সব ভাইদের কাছে বিনীতভাবে আরজ করতে চাই যে, আপনারা যদি শায়খ ইবনে বাযের (রহঃ) অনুসরণে বা নিজেদের তাহ্কীক মতো এই রাতের ফযীলতকে অস্বীকার করতে পারেন তাহলে যারা উপরোক্ত মুহাদ্দিস ও ফকীহগণের অনুসরণে উল্লেখিত হাদীসটির ভিত্তিতে এই রাতের ফযীলতের বিশ্বাস পোষণ করেন এবং সব ধরণের বেদআত রসম-রেওয়াজ পরিহার করে নেক আমলে মগ্ন থাকার চেষ্টা করেন তারাই এমন কি অপরাধ করে বসলেন যে, আপনাদেরকে তাদের পেছনে লেগে থাকতে হবে? এবং এখানকার উলামায়ে কেরামের দলীলভিত্তিক সিদ্ধান্তের বিপরীতে অন্য একটি মত যা ভুলের সম্ভাবনার উর্ধ্বে নয়, তা সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচার করে তাদেরকে আলেম-উলামার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আস্থাহীন করা এবং বাতিলপন্থিদের মিশন সফল করতে সহায়তা দেওয়া কি সত্যিকার অর্থেই খুব বেশি প্রয়োজন? এতে তো কোন সন্দেহ নেই যে, আপনারা আপনাদের মতটিকে খুব বেশি হলে একটি ইজতেহাদী ভুল-ভ্রান্তির সম্ভাবনাযুক্তই মনে করেন এবং নিশ্চয়ই আপনারা আপনাদের মতটিকে একেবারে ওহীর মতো মনে করেন না একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করুন, এরপর আপনাদের এই অবস্থানের যৌক্তিক কোন ব্যাখ্যা আর থাকে কি না?
আপনাদের প্রতি আমার সর্বশেষ অনুরোধ এই যে, দয়া করে এ রাতের ফযীলত ও আমল সম্পর্কে শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) [মৃ. ৭২৮ হিঃ] এর ইক্তিযাউস সিরাতিল মুস্তাকিম/৬৩১-৬৪১ এবং ইমাম যায়নুদ্দীন ইবনে রজব (রহঃ) [মৃ. ৭৯৫] এর লাতায়েফুল মাআরেফ ১৫১-১৫৭ পড়ুন এবং ভেবে দেখুন যে, তাদের এই দলীলনির্ভর তাহকীক অনুসরণযোগ্য, না শায়খ ইবনে বায (রহঃ) এর একটি আবেগপ্রসূত মতামত? যা হয়ত তিনি শবে বরাত নিয়ে জাহেল লোকদের বাড়াবাড়ির প্রতিকার হিসেবেই ব্যক্ত করেছেনকিন্তু এ কথা স্পষ্ট যে, বাড়াবাড়ির প্রতিকার কোন বাস্তব সত্য অস্বীকার করে নয়; বরং সত্য বিষয়টির যথাযথ উপস্থাপনের মাধ্যমেই হয়ে থাকে

শেষ কথাঃ
যদি অন্যান্য রাতের উপর এ রাতের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নাই থাকবে, তবে বিশেষভাবে এই রাতের কথা উল্লেখ করারই বা কি প্রয়োজন ? শুধু এই রাতকে বিশেষভাবে উল্লেখ করার মাধ্যমেই অন্যান্য রাতের উপর এর বিশেষত্ব প্রমাণিত হয়
উপরের হাদীস থেকে স্পষ্টতই এটা প্রমাণিত হয় যে, এ রাত্রে আল্লাহ পাক তাঁর বিপুল সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করেনযে রাত্রে আল্লাহ বিশেষভাবে ক্ষমার ওয়াদা করেছেন, সেই রাতে কাকুতি মিনতি করে তাঁর নিকট ক্ষমা চাইতে হবে এটাই স্বাভাবিকআর আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়া, তওবা করা বা যে কোন দোয়া করার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল কোন ভাল আমলের মাধ্যমে দোয়াটিকে শক্ত করা যাতে দ্রুত কবুল হয় বুখারী শরীফের তিন জন যুবকের কাহিনী হতে বিষয়টি স্পষ্ট হয় যারা পাহাড়ের গুহাতে আটকা পড়ে গিয়েছিলপরে একজনের পরামর্শে প্রত্যেকের ভাল আমল উল্লেখ করে দোয়া করলে আল্লাহ তাদের মুক্ত করেনতাছাড়া অনেক হাদীসেই নফল নামায পড়ে দোয়া করা, কোরআন তিলাওয়াত করে দোয়া করা, জিকির আযকার করে দোয়া করা ইত্যাদির প্রতি বিশেষভাবে উসাহিত করা হয়েছেসুতরাং মধ্য শাবানের এই রাতে আল্লাহর পক্ষ হতে বিশেষভাবে ক্ষমা প্রদর্শনের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার মাধ্যমে সালাত, যিকির, কোরআন তিলাওয়াত করাও প্রমাণিত হয়এরপরও যদি কেউ বলে থাকেন যে, এই রাতে কোন ইবাদত করা যাবে না, তাহলে তা তার নিজের মনগড়া কথা বা প্রলাপ ছাড়া কিছুই নয়
এজন্যই বহু ইমামগণই এ রাতের নফল ইবাদত করাকে মুস্তাহাব বলেছেন এবং নিজেরাও বেশি বেশি ইবাদতে লিপ্ত ছিলেনযেমনঃ ইমাম শাফিঈ, ইমাম নববী, ইমাম বাযযার, ইমাম উকায়লী, ইমাম তিরমিযী (রহঃ) সহ আরও অনেকে যার বিবরণ সামনে আরও আসবে ইনশাল্লাহ
অতএব, যারা এ কথা বলে থাকেন যে, শবে বরাতের কোন ভিত্তি নেই, এর ফযীলত নিয়ে কোন সহীহ হাদীস বর্ণিত নেই, তারা রসূলের (সঃ) হাদীসের নামে মিথ্যাচার করেন এবং উম্মতকে রসূল (সঃ) এর সুন্নত ও নেক আমল থেকে দূরে সরে রাখানোই তাদের মূল উদ্দেশ্যতাদের এই হীন চক্রান্তকে আমরা ধিক্কার জানাইএরকম একটি ফযীলতপূর্ণ রাত পেয়েও যে ইবাদতে কাটাতে পারল না, সে চরম দুর্ভাগা ছাড়া আর কিছুই নয়কারণ আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে কারীমে ইরশাদ করেছেনঃ
আমি জ্বীন ও ইনসানকে শুধুমাত্র আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি
এই আয়াত থেকেই বুঝা যায়, আমাদের বেশি বেশি ইবাদত করা প্রয়োজনউপরন্তু যদি ফযীলতপূর্ণ রাত পাওয়া যায়, তাহলে বেশি বেশি ফযীলত পাওয়ার জন্য ঐ রাতে বেশি বেশি ইবাদত করাই বুদ্ধিমানের কাজ