-------আ
স ম আহসান উল্লাহ আব্দুল্লাহ।
আমাদের সমাজ দিন দিন
উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে,
এই কথাটি যেমনি আমরা স্বীকার করবো, সাথে
সাথে এটাও স্বীকার করতে হবে যে আমাদের সমাজে অশান্তির মাত্রাও দিন দিন বেড়ে
চলেছে। সমাজের সার্বিক অশান্তির অনেক গুলো কারন থাকলেও প্রতিবেশীর হক অনাদায়,
সামাজিক অশান্তির এক অন্যতম কারন।
আজকের সমাজে
সম্মান-শ্রদ্ধা,
আন্তরিকতা-ভালোবাসা, পরস্পর ভ্রাতৃত্ব
বন্ধন সহ সকল সম্পর্ক যেনো অন্ধকারে নিমজ্জিত। ফলশ্রুতিতে সমাজে আজ চোগলখুরি,
হিংসা-হানাহানি, লুট-তরাজ, খুন-খারাবি, জবর দখলের মত অসামাজিক কার্যক্রম
ও অন্যায় অনিয়ম বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং “সামাজিক অশান্তি”
নামক এক ভয়াভহ ব্যধিতে গোটা সমাজ দিন দিন আক্রান্ত হচ্ছে।
সমাজের ছোট-বড় প্রত্যেকটি স্তর থেকে আমরা আমাদের প্রতিবেশীর হক আদায়ের মাধ্যমে “সামাজিক অশান্তি’ নামক এই ব্যধি থেকে
মুক্তি লাভের উপায় খোজ করতে পারি।
পবিত্র কালামে পাক
কুরআন শরিফ ও হাদিস শরিফের আলোকে প্রতিবেশীর হক আদায়ের গুরুত্ত
দিতে গিয়ে বলা হয়েছে- যে ব্যক্তি আল্লাহ ও কেয়ামতে বিশ্বাস করে, তার উচিত প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন কোন মুসলমানই মুসলমান নয়, যে পর্যন্ত সে প্রতিবেশীর জন্য কল্যাণ কামনা না করে যাহা সে নিজের জন্য কামনা করে। বোখারী ও মুসলিম শরিফে আছে – রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ’র কসম ঐ ব্যক্তি মুমিন নয় (এইভাবে ৩ বার বললেন) আরজ করা হল ইয়া রাসুলাল্লাহ ! সেই ব্যক্তি কে? রাসুল বললেন- যার প্রতিবেশি তার ক্ষতি থেকে নিরাপদ নয়। বিশিষ্ট বুযুর্গ হযরত সুফিয়ান সওবী (রাহমাতুল্লাহ আলাইহি) বলেছেন-প্রতিবেশীর মধ্যে জালিম সে ব্যক্তি যে নিজে পেঠ পুরে খায় অথচ তার গরীব প্রতিবেশি না খেয়ে দিন কাটায়।
দিতে গিয়ে বলা হয়েছে- যে ব্যক্তি আল্লাহ ও কেয়ামতে বিশ্বাস করে, তার উচিত প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন কোন মুসলমানই মুসলমান নয়, যে পর্যন্ত সে প্রতিবেশীর জন্য কল্যাণ কামনা না করে যাহা সে নিজের জন্য কামনা করে। বোখারী ও মুসলিম শরিফে আছে – রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ’র কসম ঐ ব্যক্তি মুমিন নয় (এইভাবে ৩ বার বললেন) আরজ করা হল ইয়া রাসুলাল্লাহ ! সেই ব্যক্তি কে? রাসুল বললেন- যার প্রতিবেশি তার ক্ষতি থেকে নিরাপদ নয়। বিশিষ্ট বুযুর্গ হযরত সুফিয়ান সওবী (রাহমাতুল্লাহ আলাইহি) বলেছেন-প্রতিবেশীর মধ্যে জালিম সে ব্যক্তি যে নিজে পেঠ পুরে খায় অথচ তার গরীব প্রতিবেশি না খেয়ে দিন কাটায়।
আমাদের সমাজে অনেক
সম্পদশালী, প্রভাবশালী,
টাকা-পয়সার মালিক আছেন, যারা শুধুমাত্র
নিজেদেরকে নিয়েই ব্যস্ত থাকেন, অথচ সকল ধনী মানুষের সকল
ধন সম্পদে গরিবের হকও মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা হইতে নির্ধারন করে দেওয়া
হয়েছে। গরীব প্রতিবেশী কি রান্না করলো,
খাওয়া খেলো কিনা ? ভালো জামা কাপড়
পরতে পারতেছে কিনা ? সন্তানদের ভরন-পোষন দিতে পারতেছে
কিনা ? সন্তানেরা লেখা-পরা করতেছে কিনা ? অসুস্থ হয়ে পয়সার অভাবে চিকিৎসা নিতে পারতেছেনা কিনা? মেয়ে সন্তান বড় হয়ার পরেও প্রয়জনীয় খরচের অভাবে মেয়েকে বিয়ে
দিতে পারতেছেনা কিনা? ঋণ গ্রস্ত হয়ে কোন অন্যায়ে লিপ্ত
হচ্ছে কিনা? ইত্যাদি বিষয় গুলো দেখে-শুনে এবং
সাধ্যানুযায়ি সহযোগিতা দিয়ে গরীব প্রতিবেশীর পাশে থাকা ধনী প্রতিবেশীর ঈমানী
দায়িত্ব। অথচ দুঃখজনক ভাবে বর্তমান সমাজে দেখা যায় ইসলামের এই সুন্দর
নিয়মকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। সমাজে এমনও দেখা যায় যে- এক প্রতিবেশী অন্য
প্রতিবেশীর জমি জবর দখল করে নিচ্ছে, অথচ বোখারী-মূসলিম
শরিফের হাদিসে আছে- যে ব্যক্তি অন্য কারো এক তবক জমিন অন্যায়ভাবে জবর দখল করবে,
কিয়ামতের দিন তার ঘাড়ে সাত তবক জমিন চাপিয়ে দেওয়া হবে।
প্রতিবেশীর হক সম্পর্কে
ইসলাম বলেছে- কোন প্রতিবেশী যদি বিপদগ্রস্ত হয়ে সাহায্য প্রার্থনা করে
তাকে সাধ্যানুযায়ি সাহায্য করে তাকে বিপদ মুক্ত করা, কোন প্রতিবেশী
রোগাক্রান্ত হলে হৃদয় থেকে সহানুভূতি জানানো এবং তার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার
নিকট দোয়া প্রার্থনা করা, প্রতিবেশীর মৃত্যু হলে তার
কাপন-দাপনের ব্যবস্থা করা, কোন সুখাদ্য তৈরী করলে
প্রতিবেশীর ঘরে কিছু পাঠানোর ব্যবস্থা করা, প্রতিবেশীর
কোন দোষ ত্রুটি অন্যের নিকট প্রকাশ না করা, প্রতিবেশীর
সাথে ঝগড়া না করা এমন কি অন্য কেও ঝগড়া করলে তা মিটিয়ে দেওয়ার চেস্টা করা,
কারো কান কথায় প্রতিবেশিকে ভুল না বুঝা, প্রতিবেশী দুষ্ট প্রকৃতির হলেও তার সাথে ভদ্র-নম্র ব্যবহার করা,
প্রতিবেশীর সন্তানদেরকে আদর-যত্ন করা, নিজের
স্বার্থে প্রতিবেশীর
কোন ক্ষতি সাধন না করা
এবং প্রতিবেশীর সম্পদের প্রতি কোন লোভ না করা ইত্যাদি বিষয় গুলো মেনে চলা, মুসলমান হিসাবে আমাদের
ঈমানী দায়িত্ব।
মুসলমানদের স্বর্ণ
যুগের ইতিহাস থেকে জানা জানা যানা যায়- এক মুসলমান প্রতিবেশীর ঘরে ইঁদুরের খুব
উপদ্রব, মানুষ
তাকে জিজ্ঞাস করে ভাই আপনি বিড়াল পালন করেন না কেন ? বিড়াল
পালন করলে আপনার ঘরে ইঁদুরের উপদ্রব কমে যাবে। জবাবে তিনি বললেন- আমি যদি বিড়াল
পালন করি তবে বিড়ালের মিও মিও ডাকে আমার ঘরের ইঁদুর গুলো আমার প্রতিবেশীর ঘরে
গিয়ে বাসা বাঁধবে এবং আমার প্রতিবেশীর ঘরে উপদ্রব করবে ফলে আমার প্রতিবেশী কষ্ট
পাবে যেমন কষ্ট আমি পাচ্ছি। তাই আমি চাই না আমার কোন সুবিদার জন্য আমার প্রতিবেশী
কষ্ট পায়।
মুসলমানদের
সু-সম্পর্কৃত প্রাতিবেশীক ইতিহাস ও পবিত্র কোরান-হাদিসের শিক্ষা নিয়ে, আমরা যদি যার যার
অবস্থান থেকে প্রতিবেশীর হক আদায়ে এগিয়ে আসি যেমন - বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানে
প্রভাবশালীরা এগিয়ে আসি তবে অভাবের তাড়নায় সেই বেকার প্রতিবেশী দ্বারা অসামাজিক অন্যায়
(চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই-অপহরন ইত্যাদি) হওয়ার আশংকা
থাকবেনা। অর্থশালীদের আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে যদি কোন গরীব প্রতিবেশীর উপযুক্ত
মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করতে পারি তবে ঐ প্রতিবেশীর মেয়ের দ্বারা কোন অনৈতিকতার
আশংকা থাকবেনা। সচ্ছল ও বিত্তবানদের আন্তরিক সহযগিতায় যদি সমাজের গরীব প্রতিবেশীর
সন্তানদের লেখা-পড়া ও ভরন-পোষনের সামান্য ব্যবস্থাও করা যায় তবে ঐ প্রতিবেশীর
দ্বারা সমাজের কোন প্রকার অন্যায় বা অশান্তির আশংকা থাকবেনা।
অনুরুপভাবে কোন গরীব
প্রতিবেশী সমাজের অন্য প্রতিবেশীর সম্পদের প্রতি লোভ করবেনা, চুরি-ডাকাতির মত কোন
অন্যায়ের মাধ্যমে প্রতিবেশীর সম্পদের কোন ক্ষতি করবেনা, কোন
প্রকার অশ্রদ্ধা-কটুক্তির মাধ্যমে প্রতিবেশীকে আসম্মান করবেনা, শত অভাব-অনটনে ও সকল বিপদ-আপদে মহান আল্লাহ’র উপর পুর্ন ভরসা রেখে
ধৈর্য্যধারন করবে,
নিজের সন্তানদেরকে অল্পতেই তুষ্ট থাকার শিক্ষা দিবে, নিজের অভাব-অনটনের জন্য কোন দুঃখ না করে মহান রাব্বুল আলামিনের উপর
শোকর গুজার করে জীবন-যাপনের অভ্যস্ত হতে হবে। সর্বপরি পারস্পারিক সোহার্দপুর্ন
আন্তরিক সম্পর্কের মাধ্যমে প্রাতিবেশীক সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য নিজেকে সর্বদা
সচেস্ট রাখবে।
ঠিক এভাবে মুসলমানদের
পারস্পারিক সুসম্পর্ক ও ইসলামী সু-শিক্ষানুযায়ি আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের হক
আদায়ের মাধ্যমে জীবন পরিচালনা করতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারলে সমাজে শান্তি আসবে
অনিবার্য এতে কোন সন্দেহ নাই।
তাই আসুন আমরা সবাই
পারিবারিক, সামাজিক
ও রাষ্ট্রীয় জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিবেশীদের হক সম্পর্কে সচেতন হই
অন্য প্রতিবেশীকেও সচেতন করি এবং তা আদায় করার মাধ্যমে সমাজের শান্তির আয়োজনে
নিজেকে নিবেদিত করি। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সেই তওফিক দান করবেন, আমীন।