সোমবার, ২০ আগস্ট, ২০১২

সম্মিলিত মুনাজাত


শরীয়তে এমন কোন বিধান নেই যে, প্রত্যেকটা ইবাদতের সকল অংশ কোন একটা আয়াত বা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হতে হবেনতুবা তা অগ্রহণযোগ্য হবেعن الضحاک فإذا فرغت قال من الصلاۃ المکتوبۃ، وإلی ربک فارغب، قال في المسئلۃ والدعاء۰ (الدر المنثور : ۶/۳۶۵
হযরত যাহ্‌হাক (রাঃ) সূরা ইনশিরাহ তথা আলাম নাশরাহ এর উক্ত আয়াতের
তাফসীরে বলেন, যখন তুমি ফরজ নামায থেকে ফারেগ হবে তখন আল্লাহর দরবারে দুআতে মশগুল হবে। (তাফসীরে দূররে মানছূর ঃ ৬/৩৬৫)

(إذا فرغت من الصلاۃ المکتوبۃ فانصب في الدعاء۰ (تفسیر ابن عباس : ۵۱۴

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন, “যখন তুমি ফরজ নামায হতে ফারেগ হও, তখন দুআয় মশগুল হয়ে যাবে” (তাফসীরে ইবনে আব্বাস (রাঃ), ৫১৪ পৃঃ ) قال ابن عباس وقتادۃ والضحاک ومقاتل والکلبي : إذا فرغت من الصلاۃ المکتوبۃ أو مطلق الصلاۃ فانصب إلی ربک والدعاء، وار غب إلیہ في المسئلۃ۰
(تفسیر مظہري :
۱/۲۹۴)

হযরত কাতাদাহ, যাহহাক ও কালবী (রাঃ) হতে উক্ত আয়াতের তাফসীরে বর্ণিত আছে, তাঁরা বলেন-ফরজ নামায সম্পাদন করার পর দুআয় লিপ্ত হবে
(তাফসীরে মাযহারী, ১০/২৯৪ পৃঃ)

عن ابن عباس عن النبي صلی اللہ علیہ وسلم إن اللہ تعالی قال : یا محمد! إذا صلیت فقل : اللہم إني أسئلک فعل الخیرات وترک المنکرات وحب المساکین۰
(رواہ الترمذي :
۲/۱۵۹ الحدیث ۳۲۴۹)

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ তাআলা তাকীদ করে বলেছেন যে, হে মুহাম্মাদ! যখন আপনি নামায থেকে ফারিগ হবেন তখন এ দুআ করবেন, হে আল্লাহ আমি আপনার নিকট ভাল কাজের তৌফিক কামনা করছি এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে সাহায্য চাচ্ছি এবং আপনার দরবারের মিসকীন অর্থা আল্লাহ ওয়ালাদের মুহাব্বত কামনা করছি....
(তিরমিযী শরীফ ঃ ২/১৫৯ হাঃ নং ৩২৪৯) তাদের এ আপত্তির জবাবে হযরত মাওলানা মুফতী কিফায়াতুল্লাহ (রহঃ) মুফতী আজম হিন্দুস্তান কিফায়াতুল মুফতীগ্রন্থে বলেন- বিষয়গুলো যেমন কোন এক হাদীসে একত্রিতভাবে উল্লেখিত হয়নি, তেমনি কোন হাদীসে তা নিষিদ্ধও হয়নি কোন জিনিসের উল্লেখ না থাকার দ্বারা তা নিষিদ্ধ হওয়া বুঝায় নাসুতরাং এ কথা বলা যাবে না যে, এ সব হাদীস নামাযের পরের দুআর জন্য প্রযোজ্য নয় বরং উল্লেখিত হাদীসমূহের বর্ণনা ভাব এমন ব্যাপকতা সম্পন্ন, যা সম্ভাব্য সকল অবস্থাকেই শামিল করেতা ছাড়া বিভিন্ন রিওয়ায়াতে এ অবস্থাগুলোর পৃথক পৃথক উল্লেখ রয়েছে-যার সমষ্টিগত সামগ্রিক দৃষ্টিকোণে ফরজ নামাযের পর হস্ত উত্তোলন পূর্বক সম্মিলিত মুনাজাত অনায়াসে ছাবিত হয়এটা তেমনি, যেমন নামাযের বিস্তারিত নিয়ম, আযানের সুন্নত নিয়ম, উযূর সুন্নাত তরীকা ইত্যাদি একত্রে কোন হাদীসে বর্ণিত নেইবিভিন্ন হাদীসের সমষ্টিতে তা ছাবিত হয়তারপরেও তা সকল উলামাদের নিকট গ্রহণযোগ্য
(দেখুনঃ কিফায়াতুল মুফতী, ৩:৩০০ পৃঃ)
এ প্রশ্নের জওয়াবে হযরত মাওলানা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহঃ) বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেন, “নামাযের পর মুনাজাত করার পক্ষের হাদীসগুলোর ব্যাপারে ফিকাহবিদগণ নফল এবং ফরয উভয় নামাযকেই শামিল করেছেন
(ফাইযুল বারী, ৪:৪৭ পৃঃ)

মাওলানা জাফর আহমদ উসমানী (রহঃ) বলেন, “ফরজ নামাযের পর মুনাজাত নফল নামাযের অপেক্ষা উত্তম
(লাউস সুনান, ৩ঃ১৬৭ পৃঃ)

সুতরাং কিছুক্ষনের জন্য যদি মেনে নেয়া হয় যে, উক্ত হাদীসসমূহে নফল নামাযের পর মুনাজাত করতে বলা হয়েছে তাহলে উক্ত কথার দ্বারা ফরজ নামাযের পর মুনাজাত আরো উত্তমভাবে প্রমাণিত হবেএ কারণে যে, নফল নামাযের পর দুআ কবূল হওয়ার কোন ঘোষণা করা হয় নাই, আর ফরয নামাযের পর দুআ কবূল হওয়ার ঘোষণা করা হয়েছেতো যে ক্ষেত্রে কবুল হওয়ার ঘোষণা নেই, সে ক্ষেত্রে যদি দুআ ও মুনাজাত করতে হয় তাহলে যেখানে দুআ কবুল হওয়ার ঘোষণা আছে সেখানে অবশ্যই দুআ করা কর্তব্যসুতরাং উক্ত অভিযোগ দ্বারা ফরয নামাযের পরে মুনাজাতকে অস্বীকার করা যায় না
বৃষ্টির পানি চাওয়ার জন্য ও কুনুতে নাযেলার সময় ইমাম ও মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দোয়া করেছেন ( আবু দাউদ , মিশকাত হা/১৫০৮ ; আলবানী , ছিফাতু সালাতিন নাবী পৃঃ১৫৯ )
মুনাজাতের ব্যাপারে রাসূলে করীম (সাঃ) হতে আমলী রিওয়ায়াত স্বল্প বর্ণিত হলেও মৌখিক রিওয়ায়াত প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমানঅতএব, মুস্তাহাব প্রমাণ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট

হযরত মাওলানা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহঃ) বলেন, যারা বলে থাকেন যে, মুস্তাহাব প্রমান হওয়ার জন্য রাসূলে পাক (সাঃ)-এর মৌখিক বর্ণনার পাশাপাশি আমলও থাকতে হবে, তারা সঠিক সরল পথ থেকে দূরে সরে পড়েছেন এবং একটি ফাসিদ ও গলদ জিনিসের উপর ভিত্তি করে কথা বলেছেন
(দ্রষ্টব্যঃ ফাইযুল বারী, ২ঃ৪৩১ পৃঃ)