রবিবার, ২২ এপ্রিল, ২০১২

বিয়ের সময় পুত্রের উদ্দেশে পিতার উপদেশ



হে আমার আত্মজ, প্রথমেই আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি জন্য যে তিনি আমার জীবনটাকে এতটুকু প্রলম্বিত করেছেন যে আমি তোমার বিয়ের রাত দেখতে পাচ্ছি। তুমি তোমার পুরুষত্বের পূর্ণতায় পৌঁছেছো। আজ তুমি তোমার দীনের অর্ধেক পুরো করতে যাচ্ছো। হ্যাঁ, এখন তুমি সেই জীবন থেকে বেরিয়ে যাচ্ছো যেখানে তুমি একটি মুক্ত বিহঙ্গের মতো ছিলে। কোনো বাধা-বিপত্তি ছাড়া যাচ্ছে তা- করেছো এতদিন। কোনো চিন্তা ছাড়াই সমুদ্রে গিয়ে লাফিয়ে পড়েছো। সেখান থেকে তুমি যাচ্ছো এখন এক কর্তব্যপরায়ণতা পূর্ণতার জগতে
একজন পিতা সেদিন নিজেকে সুখী মনে করেন যেদিন তিনি নিজের সন্তানকে পুরুষ হয়ে উঠতে দেখেন। তুমি এক নব্য জগতে এবং এক নতুন জীবনে পা রাখতে যাচ্ছ। তাতে অনেক কল্যাণ সৌন্দর্য রয়েছে, সুন্দরভাবে পরিচালিত নিয়ন্ত্রিত করতে পারলে তুমি তা দেখতে পাবে। আবার তাতে অনেক অপ্রিয় তিক্ত দিক রয়েছে যা তোমার জীবন দুর্বিষহ করে তুলতে পারে। তাই তোমাকে যথাযথ পরিচালনা উত্তরোত্তর উন্নতি করতে শিখতে হবে। আর অবশ্যই তোমাকে জীবন সঙ্গীনি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। তুমি দশটি বিষয়ে লক্ষ্য না রাখলে নিজ ঘরে শান্তি পাবে না। নিজের স্ত্রীর জন্য তুমি বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখবে। অতএব কথাগুলো মনে রেখ এবং এসব অর্জনে সচেষ্ট থেকো :

প্রথম দ্বিতীয় বিষয় হলো :
স্ত্রীরা প্রেম ভালোবাসাপূর্ণ আচরণ পছন্দ করে। তারা চায়  ভালোবাসার সুস্পষ্ট উচ্চারণ শুনতে চায়। অতএব
তোমার স্ত্রীর সাথে ব্যাপারে কার্পণ্য দেখাবে না। ব্যাপারে যদি কার্পণ্য করো, তবে তুমি তার নিজের মধ্যে নির্দয়তার দেয়াল টেনে দিলে। স্বামী-স্ত্রীর নির্মল ভালোবাসার ব্যকরণে ভুল করলে

তৃতীয় বিষয় হলো :
স্ত্রীরা কঠোর অনড় স্বভাবের পুরুষদের অপছন্দ করে, আর দুর্বল কোমল চিত্তধারী পুরুষদের ব্যবহার করে। অতএব প্রতিটি গুণকে স্বস্থানে রাখবে। কারণ, এটি ভালোবাসা ডেকে আনে এবং প্রশান্তি  ত্বরান্বিত করে

চতুর্থ বিষয় হলো :
মেয়েরা স্বামীর কাছে তা- প্রত্যাশা করে স্বামীরা স্ত্রীর কাছে যা প্রত্যাশা করে। যেমন : ভদ্রোচিত কথা, সুন্দর চেহারা, পরিচ্ছন্ন বসন সুগন্ধি। অতএব তোমার প্রতিটি অবস্থায় এসবের প্রতি লক্ষ্য রাখবে। স্ত্রীকে নিজের মতো করে কাছে পেতে তার কাছে এমন অবস্থায় ঘেঁষবে না যখন তোমার শরীর ঘামে জবজবে। তোমার কাপড় ময়লা। কারণ, তুমি তা করলে যদিও সে তোমার আনুগত্য দেখাবে; কিন্তু তার অন্তরে তুমি এক ধরনের বিতৃষ্ণা তৈরি করে দিলে। ফলে তার শরীরই তোমার ডাকে সাড়া দেবে। তবে অন্তর তার পালিয়ে বেড়াবে তোমার থেকে

পঞ্চম বিষয় হলো :
ঘর হলো নারীদের রাজত্ব। ঘরের মধ্যে তারা নিজেকে নিজের আসনে সমাসীন ভাবে। নিজেকে সেখানকার নেতা মনে করে। অতএব তার সাজানো এই প্রশান্তির রাজ্যটিকে তুমি তছনছ করতে যাবে না। আসন থেকে তাকে নামাবার চেষ্টাও করবে না
তুমি যদি তা- করো, তবে তাকে যেন তার রাজত্ব থেকে উচ্ছেদ করলে। আর কোনো রাজার জন্য তার চেয়ে বড় শত্রু আর কেউ হতে পারে না যে কি-না তার রাজত্ব নিয়ে টানাটানি করে। যদিও সে প্রকাশ্যে তোমাকে হয়তো কিছু বলবে না। কিন্তু এতে করে পারস্পরিক বিশ্বাস ভালোবাসার পরিবেশ দূষিত হবে

ষষ্ঠ বিষয় হলো :
নারী যেমন চায় তার স্বামীকে পেতে। তেমনি তার পরিবারকেও সে হারাতে চায় না। অতএব তুমি কিন্তু তার পরিবারের সঙ্গে নিজেকে এক পাল্লায় মাপতে যাবে না। যদি এমন চাও যে সে হয়তো তোমার হবে; নয়তো পরিবারের। তবে সে যদিও তোমাকেই অগ্রাধিকার দেবে। কিন্তু মনে মনে ঠিকই বিষণ্ন হবে। যার ভার সে তোমার দৈনন্দিন জীবন পর্যন্ত বয়ে আনবে

সপ্তম বিষয় হলো :
নিশ্চয় নারীকে সবচে বাঁকা হাড় দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। এটি তার দোষ নয়। বরং তার সৌন্দর্যের রহস্য। তার আকর্ষণের চাবিকাঠি। যেমন ভ্রুর সৌন্দর্য তার বক্রতায়
অতএব সে কোনো ভুল করলে তার ওপর এমন হামলা চালিও না যাতে কোনো সহমর্মিতা বা সদয়তা নেই। বাঁকাকে সোজা করতে গেলে তুমি তা ভেঙ্গেই ফেলবে। ক্ষেত্রে তা হলো তাকে তালাক প্রদান। পক্ষান্তরে ভুলগুলোয় প্রশ্রয় দিলে তবে তার বক্রতা বেড়েই যাবে। সে নিজেকে নিজের মধ্যে গুটিয়ে নেবে। ফলে সে তোমার জন্য যেমন নরম হবে না। তেমনি শুনবে না তোমার কথা

অষ্টম বিষয় হলো :
নারীদের সৃষ্টিই করা হয়েছে স্বামীর অকৃতজ্ঞতা এবং উপকার অস্বীকারের উপাদান দিয়ে। তুমি যদি যুগযুগ ধরে তাদের কারো প্রতি সহৃদয়তা সদাচার দেখাও তারপর শুধু একটিবার তার সঙ্গে মন্দ ব্যবহার কর তবে সে বলবে, তোমার কাছে আমি জীবনে ভালো কিছুই পেলাম না। অতএব তাদের বৈশিষ্ট্য যেন তোমায় তাকে অপছন্দ বা ঘৃণায় প্ররোচিত না করে। কারণ, তোমার কাছে তার বৈশিষ্ট্যটি খারাপ লাগলেও অনেক গুণ দেখবে তার ভালো লাগার মতো

নবম বিষয় হলো :
নানাবিধ শারীরিক দুর্বলতা মানসিক ক্লান্তির মাঝ দিয়ে নারী জীবন বয়ে চলে। দিকে লক্ষ্য রেখেই আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য কিছু ফরয পর্যন্ত ক্ষমা করে দিয়েছেন যা সময় কর্তব্য ছিল। যেমন রজস্রাব  সন্তান প্রসবকালে তার জন্য পুরোপুরিভাবে সালাত মাফ করে দিয়েছেন। সময়দুটোয় সিয়াম পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। যতক্ষণ না তার শরীরিক সুস্থতা ফিরে আসে এবং তার মেজাজ স্বাভাবিক হয়ে যায়। অতএব সময়গুলোয় তুমি আল্লাহ ইবাদতমুখী হয়ে যাবে। কারণ, তার জন্য আল্লাহ যেমন ফরযকে হালকা করে দিয়েছেন তেমনি তার থেকে তোমার চাহিদা নির্দেশও হালকা করে দিয়েছেন

দশম বিষয় হলো :
মনে রাখবে স্ত্রী কিন্তু তোমার কাছে একজন বন্দিনীর মতো। অতএব তার বন্দিত্বের প্রতি সদয় থাকবে এবং তার দুর্বলতাগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে। তাহলে সে হবে তোমার জন্য সর্বোত্তম সম্পদ। সে তোমার সর্বোত্কৃষ্ট সঙ্গী হবে। আল্লাহ তোমার কল্যাণ করুন

বিয়ের রাতে বিদায়ী কন্যার প্রতি মমতাময়ী জননীর একগুচ্ছ উপদেশ
আদরের নন্দিনী মেয়েকে চিরতরে একজনের কাছে তুলে দিতে একজন মায়ের কী কষ্ট লাগে, মমতাময়ী জননীর তখন কী আবেগের ঢেউ খেলে যায়, তাঁর চোখে তখন কত আনন্দ-বেদনার ভাবনা ভীড় করে তা একমাত্র ওই মা জননীই জানেন। কিন্তু শুধু চোখের পানি ফেলে কলিজার টুকরা মেয়েকে শুধু বিদায় জানানোই নয়, তখন যদি তাকে এমন কিছু উপদেশ শুনিয়ে দেয়া যায় যা তার সারা জীবনের সম্বল হবে, যা তার আগামীর দিনগুলোকে উজ্জ্বল সুখময় করবে তবে তা বড্ড ভালো হয়। সে থেকেই নিচের এই অমূল্য রত্নতুল্য উপদেশগুলো ভাষান্তর করে তুলে ধরা হলো। আল্লাহ আমাদের প্রতিটি বোনের এবং মেয়ের জীবনকে করুন বর্ণিল সুখময়
হে আমার মেয়ে, তুমি তোমার বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছো। যেখানে তুমি জন্মেছিলে। যে বাসস্থানে তুমি প্রতিপালিত হয়েছো। যাচ্ছো এমন পরিবেশে যার সঙ্গে তুমি মোটেও পরিচিত নও। মিলিত হবে এমন সঙ্গীদের সঙ্গে যাদের তুমি চেনো না